মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০১৭

শহীদ মিনার যে কথা বলে...



ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বসে আছি। সময়টা ঠিক বলতে পারছি না। ঘড়ি পড়ার অভ্যাস নেই। মোবাইলেও টাইমটা ঠিক মতো সেট করা হয় নি। রাত ৩টা বেজে আছে। মনে হয়, মেছের কেউ আমার সিমটা খুলে নিজের সিম লাগিয়ে ছিল, তাই হয়তো টাইমটা নড়ে গেছে।
তবে সূর্যটা ডুবে গেছে অনেক্ষন হল। সময়টা আন্দাজ করতে পারছি। তবুও কাউকে জিজ্ঞাসা করে নেয়াটাই ভাল বলে মনে হল।
আমার পাশে এক জোড়া ছেলে-মেয়ে বসে কথা বলছে। দেখে মনে হচ্ছে বয়সে কিছুটা ছোট হবে। ওদের কথোপকথন শোনার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। তবে কৌতুহল এমন একটা জিনিস, জোর করে হলেও অনিচ্ছাটিকে ইচ্ছাতে পরিণত করে। অত্যন্ত আজব মানুষের মস্তিষ্ক। মনের অজান্তেই কথাগুলো শোনার চেষ্টা করলাম।
কথা গুলো কানে ভাসছে। তবুও বুঝতে পারছি না ওরা কি বিষয়ের উপর কথা বলছে। ব্যাচেলর বলেই হয়তো বা নাকি অন্য কোনো কারন সেটাও জানি না। (নিরুপায় দু চোখ চাদের জ্যোৎস্না দেখে না। আনন্দে থেকেও তারা নিরানন্দ)
-excuse me, ভাইয়া কটা বাজে??
হাতে ঘড়ি থাকা সত্ত্বেও ছেলেটি প্যান্ট থেকে মোবাইল বের করাতেই ব্যস্ত হয়ে পরল। মেয়েটি বিষ্ময়ে একবার আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আমার নিল পাঞ্জাবিটার দিকে। তৎক্ষণাৎ ছেলেটি মোবাইল বের করল।
- ৮ টা ০৭ বাজে।
-ধন্যবাদ
প্রতিউত্তরে ছেলেটা শুধু একটা হাসি দিয়ে হালকা মাথা নাড়ালো।
ইতোমধ্যেই অনেক যুবক যুবতির আগমন ঘটেছে। কোনোখানে ঘুম ভাঙ্গা সরগোল, আবার কোথাও পাখির কিচির মিচিরে জমে উঠেছে আড্ডা মেলা।
"অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব মনে করেন, প্রতিদিন, কলেজ ভারসিটিতে পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের এই আড্ডা মেলা কে শহিদ মিনারের মানহানীর বহিঃপ্রকাশ। মানহানীর মামলা না দিলেও কটু কথা বলতে অনেকেই পিছপা হয় না।"
উঠে দাড়ালাম। নির্বাচনে দাড়ানো নেতার ভঙ্গিমায় উপস্থিত জনগণের দিকে নজর বুলিয়ে ফিরে তাকালাম শহিদ মিনারের দিকে।
মনে মনে বলতে লাগলাম, এই মানুষগুলো কি সত্যিই আজ মিনারের মানহানীর কারন হয়ে দাড়িয়েছে??
আমার তা মনে হয় না। বরং আজকের এই মানুষগুলো মিনারের প্রাঙ্গনে দাড়িয়ে চিৎকার করে বাংলা ভাষার স্বাধিনতার ঘোষনা দিচ্ছে। তারা আজ যতই বাংলা বলুক কেউ তাদের থামিয়ে দিয়ে বলতে পারবে না, উর্দু হবে এ দেশের রাষ্ট্র ভাষা।
তাদের আজকের এই আড্ডা বলে দিচ্ছে, বাংলা এখন আর কারো ধার-ধারে না। ৫২ তে সালাম, সফিক, আর কলেজ ভার্সিটির ছেলে গুলো তো নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য না, আজকের এই আড্ডার জন্যই জিবন দিয়ে গেছে।
আজকের এই তরুন প্রজন তাদের নিজেদের অজান্তেই শহিদ মিনারকে শোনাচ্ছে মিনারটির জন্মের ইতিহাস। ইট পাথরে মিনারটি কি আর গর্ব করতে পারে??
গর্ব তো এই মানুষগুলোরই, যারা মিনারের কোলে বসে অনবরত বল যাচ্ছে ইট পাথরে তৈরি মিনারটির স্বাধিনতার ইতিহাস। বাংলা কে চিত্তে ধারন করে নেয়া মানুষগুলোই তো অবলা একটি বস্তুকে বলতে শিখিয়েছে। ওরা মানহানীর নয় মিনারের প্রান সঞ্চারক, জিবনের প্রতিক।
মনে মনে মিনারটিকে অনেক লম্বা ভাষন দিয়ে ফেলেছি। যদি মিনারের হাত আর মুখ থাকতো তাহলে সে হযতো নিজের প্রশংসা শুনে বাহবা দিত। ইলেকশনে মিনারের ভোটটা হয়তো আমার ভাগ্যেই জুটতো। কি জানি, কেনোইবা এসব ভাবছি, ভেবেই বা কি হবে।
সত্য কি আর সবার চোখে ধরা দেবে?
না নিরর্থক বেচে থাকা এই পাগলের কথা কেউ শুনবে.........
পরবর্তী পোস্ট পরবর্তী পোস্ট
এটিই সবচেয়ে আগের পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট পরবর্তী পোস্ট
এটিই সবচেয়ে আগের পোস্ট
 

FeedBurner কর্তৃক নিয়োজিত